(নয়া দিল্লী, ডিসেম্বর ৩, ২০১৪) - ভারতে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের জোড় করে মানসিক হাসপাতাল ও প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হচ্ছে। তাদেরকে সেখানকার নোংরা পরিবেশে রাখা হচ্ছে। সেখানে তাদের উপর শারীরিক ও যৌন হিংসা চালানোর সম্ভাবনা রয়েছে। তাছাড়া রোগীদের সেখানে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এমনকি বৈদ্যুতিক শক থেরাপি দেয়া হচ্ছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই সব তথ্য আজকে জানিয়েছে। একজন মহিলা জানিয়েছেন যে তাদের সঙ্গে “পশুর চেয়েও খারাপ আচরণ করা হয়”।
আজকে প্রকাশিত নতুন প্রতিবেদনে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানাচ্ছে যে যেই সব নারীদের জোরপূর্বক সরকারী ও মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, তারা অনেক অপব্যবহারের শিকার। তাই যারা প্রতিবন্ধী তাদেরকে জোরপূর্বক প্রাতিষ্ঠানিক সেবা থেকে সরিয়ে স্বেচ্ছাসেবী কমিউনিটি সেবার অধীনে নিয়ে আনার জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সরকারকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আহ্বান জানিয়েছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষক কৃতি শর্মা বলেছেন, “সরকার উপযুক্ত সহায়তা এবং পরিষেবা প্রদান করতে ব্যর্থ হওয়ার কারণে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের তাদের পরিবারের সদস্যরা এমনকি পুলিশ মানসিক প্রতিষ্ঠানে রেখে আসে।” “আর একবার এমন সব প্রতিষ্ঠানে আটক হলে তাদের জীবন প্রায়ই বিচ্ছিন্নতা, ভয় ও অপব্যবহারে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে, যেই জীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার কোনো আশা থাকে না।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে যে ভারতীয় সরকারের উচিৎ অবিলম্বে মনোসামাজিক ও বুদ্ধিগত দিক থেকে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের জন্য সৃষ্ট বেসরকারী ও সরকার চালিত সকল আবাসিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিদর্শন ও নিয়মিতভাবে পর্যবেক্ষণ করা। মানসিক ও বুদ্ধিগত দিক থেকে প্রতিবন্ধী মানুষরা যাতে নিজেরা তাদের জীবনের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত এবং অনুমতি দানের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করতে পারে, তা নিশ্চিত করার জন্য ভারতের ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ।
“‘ট্রিটেড ওয়ার্স দ্যান এনিমালস’ঃ এবিউসেস এগেইন্সট ওমেন এন্ড গার্লস উইথ সাইকোসোশাল অর ইন্টেলেকচুয়াল ডিসাবিলিটিস ইন ইন্সটিটিউশন্স ইন ইন্ডিয়া” নামক ১০৬-পৃষ্ঠার প্রতিবেদন সারা ভারত জুড়ে মানসিক হাসপাতাল এবং আবাসিক সেবা প্রদান প্রতিষ্ঠানে অনিচ্ছুক ভর্তি ও বিধিবহির্ভূত আটকের ঘটনা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। এই সব প্রতিষ্ঠানে মনোসামাজিক ও বুদ্ধিগতভাবে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের ঠাসাঠাসি ও নোংরা পরিবেশের মধ্যে থাকতে হয়। সেখানে যেমন রয়েছে অপর্যাপ্ত সাধারণ স্বাস্থ্যসেবা, একই সাথে সেখানে ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি সহ জোরপূর্বক চিকিৎসা দান করা হয়। সেখানকার নারী ও মেয়েরা শারীরিক, মৌখিক এবং যৌন হিংসার শিকার হয়। এমন একটি ঘটনায় কলকাতার এক মানসিক হাসপাতালে বুদ্ধিগত ও মনোসামাজিকভাবে প্রতিবন্ধী একজন নারীকে সেখানকার একজন পুরুষ কর্মচারী লাঞ্ছিত করে। মনোসামাজিক ও বুদ্ধিগতভাবে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েরা যেই সব বাঁধার কারণে তাদের প্রতি করা অপব্যবহারের কথা জানাতে ও আইনের আশ্রয় নিতে পারে না, সেই সব বাঁধা অনুসন্ধান করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে।
বুদ্ধিগত ও মনোসামাজিকভাবে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের প্রতি অপব্যবহার রোধে ও তাদের অধিকার রক্ষার্থে দুটি আইন ভারতের সংসদের সামনে বিবেচ্য আছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ভারতীয় সরকারকে সেই আইন দুটোকে সংশোধন এবং দ্রুততার সাথে সংস্কার করার দাবী জানাচ্ছে।
প্রতিবেদনটি ভারতের ছয়টি শহরে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের অবস্থা পর্যালোচনা করেছে। ডিসেম্বর ২০১২ থেকে শুরু করে নভেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত নয়া দিল্লী, কলকাতা, মুম্বাই, পুনে, বেঙ্গালুরু ও মাইসোরে গবেষণা চালানো হয়। একই সময়কালে ২০০’র অধিক সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়। এদের মধ্যে ছিল মনোসামাজিকভাবে ও বুদ্ধিগতভাবে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়ে, তাদের পরিবারের সদস্য, তাদের সেবায় নিয়োজিত ব্যক্তি, পেশাদার মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কিত কর্মজীবী, পরিসেবা প্রদানকারী, সরকারী কর্মকর্তা এবং পুলিশ বাহিনীর সদস্য। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২৪টি মানসিক হাসপাতাল বা জেনারেল হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে যেখানে সাইকিয়াট্রিক বেড, পুনর্বাসন কেন্দ্র এবং আবাসিক সেবা সুবিধাদি ছিল।
মনোসামাজিক ও বুদ্ধিগত অক্ষমতা সম্পর্কিত কোন পরিষ্কার সরকারী সমীক্ষা বা হিসাব ভারতে নেই। ২০১১ সালের আদমসুমারি অনুযায়ী ভারতের জনসংখ্যার মাত্র ২.২১% ভাগ মানুষের শারীরিক বা মানসিক অক্ষমতা রয়েছে - যাদের মধ্যে রয়েছে বুদ্ধিগতভাবে অসমর্থ ১.৫ মিলিয়ন মানুষ (জনসংখ্যার ০.১% ভাগ) এবং মনোসামাজিকভাবে প্রতিবন্ধী ৭২২,৮২৬ মানুষ যাদের মানসিক সীমাবদ্ধতা আছে (যেমন স্রিজোফেনিয়া বা বাইপোলার কন্ডিশন) (জনসংখ্যার ০.০৫% ভাগ)। এই হিসাবগুলো জাতিসংঘ এবং ওয়ার্ল্ড হেলথ অরগানাইসেশন-এর দেয়া হিসাব থেকে বেশ কম। আন্তর্জাতিক এই দুটি সংস্থা অনুযায়ী পৃথিবীর জনসংখ্যার ১৫% ভাগ মানুষের অক্ষমতা রয়েছে। ভারতের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় দাবী করে যে ভারতের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ (৬-৭% ভাগ, ৭৪.২-৮৬.৫ মিলিয়ন) “মানসিক রোগে” আক্রান্ত। তাছাড়া মন্ত্রণালয় আরো দাবী করছে যে জনসংখ্যার ১-২% ভাগ (১২.৪ - ২৪.৭ মিলিয়ন) “গুরুতর মানসিক রোগে” আক্রান্ত।
কমিউনিটি ভিত্তিক সেবা প্রদানের জন্য ১৯৮২ সালে ভারতীয় সরকার ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম চালু করে। কিন্তু পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতিতে এই প্রোগ্রামের নাগাল সীমিত ছিল। একই সাথে এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও ছিল গভীরভাবে ত্রুটিপূর্ণ। ভারতের ৬৫০ জেলার মধ্যে ১২৩টি জেলাতে ডিসট্রিক্ট মেন্টাল হেলথ প্রোগ্রাম চালু আছে। এখানেও রয়েছে নানা সীমাবদ্ধতা, যেমন অভিগম্যতা ও জনশক্তির অভাব, প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে সামঞ্জস্যের অভাব এবং প্রমিত প্রশিক্ষণের অনুপস্থিতি।
সারা দেশে লিঙ্গ ভিত্তিক বৈষম্য বজায় থাকার কারণে মনসামাজিক ও বুদ্ধিগত প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের একাধিক স্তরের বৈষম্যের শিকার হতে হয়। এর মূল কারণ হিসেবে থাকে তাদের সামাজিক অক্ষমতা এবং লিঙ্গ। এই জন্য এমন সব মানুষদের সমূহ সম্ভাবনা থাকে একঘরে হয়ে যাওয়ার এবং হিংসার শিকার হওয়ার। যত্ন নিতে অক্ষম পরিবার তাদেরকে দূরে ঠেলে দেয়ায় এদের অনেকেই বাধ্য হয়ে নানা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হয়। ভারতে নারী ও পুরুষদের এমন সব প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার প্রক্রিয়া একই রকম। কিন্তু নারী ও মেয়ে প্রতিবন্ধীরা অনেক মৌলিক সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকে - যেমন যৌন হিংসা বা প্রজনন স্বাস্থ্য সেবা গ্রহণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া। পুরুষদের এমন সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় না।
শর্মা বলেন, “উপযুক্ত সামাজিক সমর্থন এবং সচেতনতা না থাকার কারণে ভারতে মনোসামাজিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের প্রতি ঠাট্টা, ভয় এবং কলঙ্কিত করা হয়।”
পরিবার, আইনগত অভিভাবক ও শিশু কল্যাণ কমিটি মনোসামাজিক ও বুদ্ধিগতভাবে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের তাদের অনুমতি ছাড়া প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করতে পারে। রাস্তায় বিচরণ করতে দেখা গেলে কোর্ট অর্ডারের মাধ্যমে পুলিশ তাদেরকে উঠিয়ে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করাতে পারে। পরিবারের কোন সদস্য তাদের না নিতে এলে প্রায়ই তাদের কয়েক দশক সেখানে কাটিয়ে দিতে হয়। বর্তমান এবং অতীতে এমন প্রতিষ্ঠানে থাকা নারী ও মেয়েদের সাক্ষাৎকার নিয়েছিল হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। এদের মধ্যে একজনও স্বেচ্ছায় উল্লেখিত প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হননি। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের নথিভুক্ত প্রাতিষ্ঠানিক নির্যাতনের ১২৮টি ঘটনার মধ্যে একজন নারী বা মেয়ে ছিল না যেখানে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়া বা সেই প্রতিষ্ঠানে অপব্যবহারের শিকার হওয়ার কারণে সফলভাবে সে প্রতিকার প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে পেরেছিল। যেই সব নারী ও মেয়েদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছিল তাদের অধিকাংশই প্রতিকার ব্যবস্থা সম্পর্কে অবহিত ছিল না।
শর্মা বলেন, “দীর্ঘমেয়াদী সময় ধরে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের আটকিয়ে রাখা কোনভাবেই সমাধান হিসেবে বিবেচিত হতে পারে না।” “গুরুতর ঘটনাগুলোতেও দেখা যায় যে কি ধরণের সেবা তারা চাচ্ছেন তারা তা বলতে সক্ষম।”
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ যেই সব প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছিল সেগুলোর মধ্যে কয়েকটিতে স্থানাভাব ও পরিবেশ নোংরা ছিল। এগুলো গুরুতর উদ্বেগের কারণ ছিল। যেমন নভেম্বর ২০১৪ পর্যন্ত বুদ্ধিগত প্রতিবন্ধীদের জন্য দিল্লীতে অবস্থিত আশা কিরান নামের একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৯০০ জন মানুষ থাকতো, যা ছিল হাসপাতালটির ধারণক্ষমতার তিন গুণ বেশী। পুনে মেন্টাল হাসপাতালের সুপারিন্টেনডেন্ট ড. ভিলাশ ভাইলুমে হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলেনঃ “১,৮৫০ রোগীর জন্য আমাদের মাত্র ১০০টি বাথরুম রয়েছে। এদের মধ্যে ২৫টি বাথরুম সচল আছে। বাকিগুলো শুধু বন্ধ হয়ে যায়। অনেকেরই খোলা আকাশের নীচে মল ত্যাগ করার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে।”
৪টি মানসিক হাসপাতালে ২০ জন নারী ও ১১ জন মেয়েকে চলতি বা সাম্প্রতিক কালে সম্মতি ছাড়া ইলেক্ট্রোকনভালসিভ থেরাপি (ইসিটি) দেয়া হয়েছে, এমন ঘটনা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ নথিভুক্ত করেছে। মনোসামাজিক অক্ষমতা থাকা ৪৫ বছর বয়সী বিদ্যা’কে [তার আসল নাম নয়] তার স্বামী একটি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করে যেখানে তার উপর মাসের পর মাস ইসিটি চালানো হয়। বিদ্যা হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে বলে, “ইসিটি ছিল একটি মৃত্যু সুরঙ্গের মতো।” “দিনের পর দিন আমার মাথায় ব্যথা হতো। ... যখন ঔষধের পরিমাণ কমিয়ে আনা হয়, আমি প্রশ্ন করতে শুরু করি। তার আগ পর্যন্ত আমি একটি জায়মান অবস্থায় ছিলাম। বহু মাস বুঝতেই পারিনি যে আমাকে ইসিটি দেয়া হয়েছে।”
ভারত ২০০৭ সালে কনভেনশন অন দা রাইটস অফ পার্সন্স উইথ ডিসাবিলিটিস (সিআরপিডি) নামের একটি চুক্তি অনুমোদন করে। চুক্তি অনুযায়ী সরকারকে প্রতিবন্ধী মানুষদের আইনি অধিকার এবং সমাজে সকলের সঙ্গে সমতার ভিত্তিতে বেঁচে থাকার অধিকারকে সম্মান ও রক্ষা করতে হবে। জোরপূর্বক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। তবে, ভারতের আদালত মনোসামাজিক ও বুদ্ধিগতভাবে প্রতিবন্ধী মানুষদের মুক্ত ও ওয়াকিবহাল সম্মতি ছাড়াই তাদের পক্ষ হয়ে সিদ্ধান্ত নিতে অভিভাবক নিয়োগ দেয়। তা ছাড়া ভারতে এখনো এমন একটি স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বহাল আছে যেখানে শারীরিকভাবে অক্ষম মানুষদের সমাজের মাঝে রেখে সহায়তা ও পরিষেবা না দিয়ে উল্টো তাদেরকে আলাদা প্রতিষ্ঠানে নিঃসঙ্গ অবস্থায় রাখা হয়।
সিআরপিডি’র সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভারতীয় আইন তৈরির লক্ষ্যে সরকার ২০১৩ সালে মেন্টাল হেলথ বিল এবং রাইটস অফ ডিসাবিলিটিস বিল নামের দুটি বিল সংসদে উপস্থাপন করেছিল। তবে বিল দুটির বিধান চুক্তি অনুযায়ী মনোসামাজিক ও বুদ্ধিগতভাবে প্রতিবন্ধী নারী ও মেয়েদের আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ ও স্বাধীন ভাবে বেঁচে থাকার অধিকার সম্পূর্ণ ভাবে নিশ্চিত করতে পারছে না।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের অবিলম্বে একটি মূল্যায়নের নির্দেশ দেয়া উচিৎ এবং মানসিক হাসপাতাল, রাষ্ট্র ও এনজিও চালিত আবাসিক সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে অবমাননাকর চর্চা ও অমানবিক অবস্থায় পরিবর্তন আনতে পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিৎ। অভিভাবকত্ব নিষিদ্ধ করা এবং সমতার সঙ্গে সকলের সাথে শারীরিক ও মানসিকভাবে অক্ষম ব্যক্তিদের আইনি ক্ষমতা প্রয়োগ করার অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়ার লক্ষ্যে ভারতের অবিলম্বে ব্যাপক আইনি সংস্কার আনা উচিৎ। একই সাথে উচিৎ দীর্ঘমেয়াদী আবাসিক সেবার পরিবর্তে একটি সময় সাপেক্ষ পুরনাঙ্গ সেবাদান সম্পর্কিত পরিকল্পনা তৈরি করা। ভারতে অল্প সংখ্যক স্থানীয় সামাজিক সহায়তা ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার প্রকল্পগুলো এনজিও দ্বারা পরিচালিত, যেমন অঞ্জলিঃ মেন্টাল হেলথ অরগানাইসেশন (কলকাতা), দি ব্যানইয়ান (চেন্নাই), বাপু ট্রাস্ট ফর রিসার্চ অন্য মাইন্ড এন্ড ডিস্কোর্স (পুনে), এবং ইশওয়ার সংকল্প (কলকাতা)।
শর্মা বলেন, “ভারতের এই পৃথকীকরণ ও অপব্যবহারের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে এসে সেবা এবং স্বাধীনতার উপর ভিত্তি করা একটি প্রক্রিয়া চালু করার সুযোগ আছে।” “লক্ষ লক্ষ মনোসামাজিক ও বুদ্ধিগতভাবে প্রতিবন্ধী নারীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।”
প্রতিবেদন থেকে কিছু সাক্ষ্য
“আমি জেলখানার একজন বন্দী মানুষের মত ছিলাম যার মুক্তির কোন আশা ছিল না।” - জোরপূর্বক মানসিক হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার অভিজ্ঞতা বর্ণনাকালে ৪৫ বছর বয়সী নারী বিদ্যা বলছিলেন।
“নার্সরা তাদের সামনে আমাদের ঔষধ খাওয়াতেন। যদি বলতাম যে বেশী ট্যাবলেট আছে তাহলে তারা জোর করে ট্যাবলেট মুখে ভরে দিতো এবং আমি যেভাবে আমার কুকুরদের খাওয়াই সেভাবে আমার গলা ধরে খাওয়াতো। রোগীর কথা কখনোই বিবেচনা করা হয় না। ... আমি ভীত ছিলাম। তারা ওখানে যা করতো, তার উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণই ছিল না।” - দীপালী [নাম পরিবর্তিত]। দিল্লীর এই ৪৩ বছর বয়সী নারীকে তথাকথিত মনোসামাজিকভাবে প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তার পরিবার তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে দুই বার প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেছিল।
“পরিবার সবসময় জোর করে মানসিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করায়। ... একবার ঢুকলে এখানে থেকে বের হওয়া সম্ভব না।” - রত্নাবতি রয়। অঞ্জলিঃ মেন্টাল হেলথ রাইটস অরগানাইসেশনের প্রতিষ্ঠাতা, কলকাতা।
“আমার এখানে দম বন্ধ হয়ে আসে। আমার এখানে ভালো লাগে না। এটি একটি হাসপাতাল। আমাকে বাসায় নিয়ে যাবে?” - প্রিয়া। বুদ্ধিগত প্রতিবন্ধী ২২ বছর বয়সী মেয়ে যাকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা হয়েছিল। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের একজন গবেষককে তিনি এই কথা বলেন।
“এরকম প্রতিষ্ঠান [আবাসিক সেবাদান প্রকল্প] বন্ধ করার জন্য আমাদের কিছু করা উচিৎ। এই ব্যবস্থাকে আমাদের ভেঙ্গে ফেলতে হবে এবং এই শিশুদের জন্য আশ্রয় খুঁজে বের করতে হবে।” - পুনম নটরাজন, ন্যাশনাল ট্রাস্ট দিল্লীর প্রাক্তন চেয়ারপার্সন।
“আমরা মনে অনেক দুঃখ নিয়ে শিশুদের আশা কিরণে পাঠাই কারণ আমরা জানি যে ওখানে যা ওদের শেখানো হয় - যেমন হ্যান্ডশেক করা, সাধারণ বিষয়ে আলাপ বা কোন কাজ করা, সবই কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই তারা তা ভুলে যাবে।” - একটি শিশুদের প্রতিষ্ঠানের শিশু কল্যাণ কমিটির সদস্য এই কথা বলেন।
“আত্মীয়স্বজনরা হাসপাতালে রোগীদের ফেলে আসে এবং ভাবে যে তাদের দায়িত্ব শেষ হয়ে গিয়েছে। তারা ইচ্ছা করে ভুল ঠিকানা এবং ফোন নম্বর নিবন্ধন ফর্মে লিখে যায় যাতে আমরা তাদের সাথে আর যোগাযোগ না করতে পারি।” - মনরোগ সংক্রান্ত নার্স [নাম প্রকাশ করা গেলো না], পুনে মেন্টাল হাসপাতাল, পুনে।
“আমি সপ্তাহে দুই বার গোসল করি এবং দুই সপ্তাহে একবার চুল ধুই। ... আমাদের শুধু এক জোড়া জামাকাপড় আছে। যখন গোসল করি তখন আমরা কাপড় বদলাই। সবার জন্য একটাই চিরুনি আছে। সবাই শুধুমাত্র একটি তয়লা ব্যবহার করে।” - স্রুতি। একজন ৩৮ বছর বয়সী নারী যিনি একটি নারীদের জন্য সরকারী প্রতিষ্ঠানে থাকেন।
“হাউস আন্টি [প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী] যিনি আমাকে স্কুলে নামিয়ে দেন, তিনি আমার মারধোর করেন। প্রতিষ্ঠানে থাকাকালেও তিনি আমাকে মারেন। তিনি অনেক জোড়ে আমাকে থাপ্পড় দেন। আমার অনেক ব্যথা লাগে। তিনি যখন আমাকে মারেন আমার অনেক কান্না পায় আর আমার অনেক মন খারাপ লাগে। আমার স্কুলেও কাঁদতে ইচ্ছা করে। ... আমি এই জায়গা থেকে চলে যেতে চাই।” - কারিশমা। ১১ বছর বয়সী একটি মেয়ে যার সামান্য বুদ্ধিগত অক্ষমতা রয়েছে। সে একটি সরকারী আবাসিক সেবাদান প্রতিষ্ঠানে থাকে।